শিরোনামঃ
তারেক রহমানের নির্দেশনা অমান্য করে সাজুর মোটরসাইকেল শোডাউনে হতাশ নেতাকর্মীরা এলজিইডির প্রশাসনিক শাখার কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ও স্ত্রী মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মান্দায় ভূয়া প্রকল্পের নামে অর্থ হরিলুটের অভিযোগ রকিবুল হাসান রনি ও তার পরিবারের ভয়ঙ্কর প্রতারণার জাল এনবিআরের কর পরিদর্শক সাইদুর রহমানের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ: কোটি টাকার সম্পদের খোঁজে আইটিআইআইইউ দুর্নীতির বরপুত্র মঞ্জুর আলী পর্ব -১ প্রকল্প শুরু হতেই শত কোটি টাকা পিডি মঞ্জুর আলীর পকেট পিডি মঞ্জুর আলী আউটসোর্সিং নিয়োগের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা জুড়ীতে যুবলীগ নেতাকে থানা থেকে ছাড়াতে বিএনপির সভাপতি মাসুম রেজার তদবির বিজিবি সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন বেপারীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগ সেনাবাহিনীর মধ্যে থাকা 'ফ্যাসিস্ট এজেন্টদের' বিচার দাবি

তারেক রহমানের নির্দেশনা অমান্য করে সাজুর মোটরসাইকেল শোডাউনে হতাশ নেতাকর্মীরা

#
news image

সিলেট বিভাগের মনোনয়ন প্রক্রিয়া চলাকালীন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল— নমিনেশন যেই পান, তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে বুধবার (৫ নভেম্বর ) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত মৌলভীবাজার-১ বড়লেখা ও জুড়ী সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া শরিফুল ইসলাম সাজুর নেতৃত্বে মোটরসাইকেল শোডাউন হওয়ায় দলে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের এই ঘটনায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে, যা আসন্ন নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষণা অনুযায়ী, মনোনয়ন ঘোষণার পর সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হলেও, সেই নির্দেশনার বাইরে আচরণ করছেন শরিফুল হক সাজু—এমন অভিযোগ উঠেছে দলের অভ্যন্তর থেকেই। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর যেখানে প্রত্যাশিত ছিলো সবাই এক ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হবেন, সেখানে শরিফুল হক সাজু নিজের সমর্থকদের নিয়ে আলাদা মোটরসাইকেল শোডাউন করেছেন। এই আসনের সচেতন মানুষ বলেছেন, এটি কেবল দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থীই নয়, বরং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে দলীয় ঐক্যের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শরিফুল হক সাজু এখনো তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করে যাচ্ছেন 'নমিনেশন তিনি নিজেই পাবেন'  যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মৌলভীবাজার-১ আসনে নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠুর নাম নিশ্চিত করা হয়েছে। তাঁর এই অবস্থান এবং সাম্প্রতিক শোডাউন বড়লেখা ও জুড়ীর স্থানীয় রাজনীতিতে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। অনেক সাধারণ নেতা-কর্মী এই পরিস্থিতিতে হতাশ ও বিভ্রান্ত বোধ করছেন।

বড়লেখা বিএনপির মূলধারার নেতারা মনে করছেন, দল যখন নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় এবং হাজারো নারী-পুরুষের মাঝে দলের ৩১ দফা “রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত” পরিকল্পনা প্রচারে ব্যস্ত, তখন একই দলের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া শরিফুল হক সাজুর এই ধরনের কার্যক্রম দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।

একাধিক স্থানীয় নেতা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুব পরিষ্কারভাবে বলেছেন, যে কেউ মনোনয়ন পাক বা না পাক, সবার লক্ষ্য হবে বিএনপিকে ক্ষমতায় ফেরানো। কিন্তু শরিফুল হক সাজুর  সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে সেই নির্দেশনার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এতে মাঠপর্যায়ের কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। সাজুর এই প্রচারণা নিয়ে ফেসবুকে নানা রকম মন্তব্য করছেন মানুষ। 

বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক কায়সারুল ইসলাম সুমন ফেসবুকে লিখেছেন, - " বড়লেখা-জুুুরির বিভাজনের রাজনীতির দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। দলীয় প্রার্থী ঘোষনার পর  বড়লেখায় শরীফুল হক সাজুর শোডাউন এবং কৌশলী বক্তব্য সাধারণ মানুষকে হতাশ করেছে। সাজুর অপার সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য আজকের দিনটি কাল অধ্যায় বলে বিবেচিত হবে। বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্ত অত্র অঞ্চলের ধানের শীষের কান্ডারী আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন মিঠুকে নিয়ে বড়লেখা বিএনপি'র মূলধারার  রাজনীতিবিদরা হাজারো নারীপুরুষের মাঝে  যখন জনাব তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার প্রচার এবং প্রাক-নির্বাচনী সভা নিয়ে ব্যস্ত, সেই মুহুর্তে শোডাউন করে তারেক রহমানকে ধানের শীষের উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয়  ব্যক্ত করলেও বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং গর্হিত কাজ করেছেন বলে আমি যেমন বিশ্বাস করি তেমনি অভিজ্ঞ মহলের ধারনা ঠিক তাই। ঐক্যের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে নাসির উদ্দিন মিঠুর বিজয় সুনিশ্চিত করুন।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্য করে শরিফুল হক সাজুর সাম্প্রতিক শোডাউন এবং বক্তব্য দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তাঁরা হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য। তারা বলেন, মৌলভীবাজার-১ আসনটি বিএনপির ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটি। এখানকার নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে, ধানের শীষ আবারও বিজয়ী হবে। কিন্তু যদি কেউ স্বার্থান্বেষী মনোভাব দেখায়, তাহলে সেই ঐক্য ভেঙে যাবে।”

জুড়ী উপজেলা বিএনপি'র এক প্রবীণ নেতা বলেন, সবাইকে এখন বুঝতে হবে, এই নির্বাচন কেবল ব্যক্তিগত লড়াই নয়, এটি বিএনপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই। যদি এখনই বিভাজন বন্ধ করে দলীয় শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা না যায়, তাহলে মৌলভীবাজার-১ আসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিএনপি রাজনৈতিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।

স্থানীয় নেতারা জানান, দলের ঐক্য বজায় রাখতে হলে শরিফুল হক সাজু ও তাঁর অনুসারীদের দ্রুত কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠুর পাশে দাঁড়ানো উচিত।

বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান খসরু  বলেন, আমাদের মফস্বলের রাজনীতি ধানের শীষ প্রতিকের রাজনীতি। দল নাসির উদ্দিন মিঠুকে মৌলভীবাজার-১ আসলে দলীয় প্রার্থী দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের জন্য কাজ করছেন। তবে কিছু সুবিধাবাদী যারা সারা জীবন নিজের স্বার্থের জন্য কাজ করেন, তারা শরিফুল হক সাজুকে নিয়ে জামায়তের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে মাঠে কাজ করছে। নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠুর দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতের পর শরিফুল হক সাজুর শোডাউনে আমরা নিজেরাই লজ্জিত। এ ব্যাপারে আমরা দলীয় হাই কমান্ডকের সাথে আলাপ করব।
 
জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান চুনু বলেন, মৌলভীবাজার-১ আসনে আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু কে বিএনপি'র দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করায় জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ আপামর জনসাধারণ আনন্দিত। নাসির উদ্দিন মিঠুর নেতৃত্বে দেশ নায়ক তারেক রহমানের ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাশী অপর এক প্রার্থী শরিফুল হক সাজুকে বিগত ১৭ টি বছর আমরা মাঠে পাইনি। এখন তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শোডাউন করে গ্রুপিং এর রাজনীতি শুরু করেছেন। যা দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। 
এ বিষয়ে শরিফুল হক সাজুকে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছরের নিরলস রাজনৈতিক ত্যাগ, নিষ্ঠা ও সংগঠনের প্রতি অবিচল আনুগত্যের স্বীকৃতি হিসেবেই মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা–জুড়ী) সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু। রাজনৈতিক প্রতিকূল সময়েও তিনি দলের পতাকা হাতে রেখেছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ছিলেন অগ্রণী। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের পাশে থেকে তিনি যেমন সংগঠনের ভেতর ঐক্য সৃষ্টি করেছেন, তেমনি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন সৎ ও বিনয়ী আচরণে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষায়, মিঠু শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, তিনি বড়লেখা–জুড়ীর মানুষের ভরসার প্রতীক।

বিএনপির কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড তাঁর দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক ভূমিকা, প্রবাসী ও স্থানীয় পর্যায়ে সক্রিয় যোগাযোগ এবং দলের প্রতি অগাধ একনিষ্ঠতা বিবেচনা করেই এবার তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মিঠুর প্রার্থিতা শুধু ব্যক্তিগত সম্মান নয়, এটি দলের প্রতি তাঁর ধারাবাহিক অবদানের মূল্যায়ন। তিনি ইতিমধ্যেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে একত্রে কাজ শুরু করেছেন। তারেক রহমান ঘোষিত “রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা” বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছেন। ফলে মৌলভীবাজার-১ আসনে বিএনপির ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার আশার প্রতীক হয়ে উঠেছেন আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু।

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬-১১-২০২৫ রাত ৮:২০

news image

সিলেট বিভাগের মনোনয়ন প্রক্রিয়া চলাকালীন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল— নমিনেশন যেই পান, তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে বুধবার (৫ নভেম্বর ) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত মৌলভীবাজার-১ বড়লেখা ও জুড়ী সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া শরিফুল ইসলাম সাজুর নেতৃত্বে মোটরসাইকেল শোডাউন হওয়ায় দলে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের এই ঘটনায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে, যা আসন্ন নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষণা অনুযায়ী, মনোনয়ন ঘোষণার পর সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হলেও, সেই নির্দেশনার বাইরে আচরণ করছেন শরিফুল হক সাজু—এমন অভিযোগ উঠেছে দলের অভ্যন্তর থেকেই। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর যেখানে প্রত্যাশিত ছিলো সবাই এক ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হবেন, সেখানে শরিফুল হক সাজু নিজের সমর্থকদের নিয়ে আলাদা মোটরসাইকেল শোডাউন করেছেন। এই আসনের সচেতন মানুষ বলেছেন, এটি কেবল দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থীই নয়, বরং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে দলীয় ঐক্যের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শরিফুল হক সাজু এখনো তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করে যাচ্ছেন 'নমিনেশন তিনি নিজেই পাবেন'  যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মৌলভীবাজার-১ আসনে নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠুর নাম নিশ্চিত করা হয়েছে। তাঁর এই অবস্থান এবং সাম্প্রতিক শোডাউন বড়লেখা ও জুড়ীর স্থানীয় রাজনীতিতে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। অনেক সাধারণ নেতা-কর্মী এই পরিস্থিতিতে হতাশ ও বিভ্রান্ত বোধ করছেন।

বড়লেখা বিএনপির মূলধারার নেতারা মনে করছেন, দল যখন নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় এবং হাজারো নারী-পুরুষের মাঝে দলের ৩১ দফা “রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত” পরিকল্পনা প্রচারে ব্যস্ত, তখন একই দলের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া শরিফুল হক সাজুর এই ধরনের কার্যক্রম দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।

একাধিক স্থানীয় নেতা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুব পরিষ্কারভাবে বলেছেন, যে কেউ মনোনয়ন পাক বা না পাক, সবার লক্ষ্য হবে বিএনপিকে ক্ষমতায় ফেরানো। কিন্তু শরিফুল হক সাজুর  সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে সেই নির্দেশনার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এতে মাঠপর্যায়ের কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। সাজুর এই প্রচারণা নিয়ে ফেসবুকে নানা রকম মন্তব্য করছেন মানুষ। 

বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক কায়সারুল ইসলাম সুমন ফেসবুকে লিখেছেন, - " বড়লেখা-জুুুরির বিভাজনের রাজনীতির দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। দলীয় প্রার্থী ঘোষনার পর  বড়লেখায় শরীফুল হক সাজুর শোডাউন এবং কৌশলী বক্তব্য সাধারণ মানুষকে হতাশ করেছে। সাজুর অপার সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য আজকের দিনটি কাল অধ্যায় বলে বিবেচিত হবে। বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্ত অত্র অঞ্চলের ধানের শীষের কান্ডারী আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন মিঠুকে নিয়ে বড়লেখা বিএনপি'র মূলধারার  রাজনীতিবিদরা হাজারো নারীপুরুষের মাঝে  যখন জনাব তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার প্রচার এবং প্রাক-নির্বাচনী সভা নিয়ে ব্যস্ত, সেই মুহুর্তে শোডাউন করে তারেক রহমানকে ধানের শীষের উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয়  ব্যক্ত করলেও বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং গর্হিত কাজ করেছেন বলে আমি যেমন বিশ্বাস করি তেমনি অভিজ্ঞ মহলের ধারনা ঠিক তাই। ঐক্যের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে নাসির উদ্দিন মিঠুর বিজয় সুনিশ্চিত করুন।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্য করে শরিফুল হক সাজুর সাম্প্রতিক শোডাউন এবং বক্তব্য দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তাঁরা হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য। তারা বলেন, মৌলভীবাজার-১ আসনটি বিএনপির ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটি। এখানকার নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে, ধানের শীষ আবারও বিজয়ী হবে। কিন্তু যদি কেউ স্বার্থান্বেষী মনোভাব দেখায়, তাহলে সেই ঐক্য ভেঙে যাবে।”

জুড়ী উপজেলা বিএনপি'র এক প্রবীণ নেতা বলেন, সবাইকে এখন বুঝতে হবে, এই নির্বাচন কেবল ব্যক্তিগত লড়াই নয়, এটি বিএনপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই। যদি এখনই বিভাজন বন্ধ করে দলীয় শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা না যায়, তাহলে মৌলভীবাজার-১ আসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিএনপি রাজনৈতিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।

স্থানীয় নেতারা জানান, দলের ঐক্য বজায় রাখতে হলে শরিফুল হক সাজু ও তাঁর অনুসারীদের দ্রুত কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠুর পাশে দাঁড়ানো উচিত।

বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান খসরু  বলেন, আমাদের মফস্বলের রাজনীতি ধানের শীষ প্রতিকের রাজনীতি। দল নাসির উদ্দিন মিঠুকে মৌলভীবাজার-১ আসলে দলীয় প্রার্থী দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের জন্য কাজ করছেন। তবে কিছু সুবিধাবাদী যারা সারা জীবন নিজের স্বার্থের জন্য কাজ করেন, তারা শরিফুল হক সাজুকে নিয়ে জামায়তের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে মাঠে কাজ করছে। নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠুর দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতের পর শরিফুল হক সাজুর শোডাউনে আমরা নিজেরাই লজ্জিত। এ ব্যাপারে আমরা দলীয় হাই কমান্ডকের সাথে আলাপ করব।
 
জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান চুনু বলেন, মৌলভীবাজার-১ আসনে আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু কে বিএনপি'র দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করায় জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ আপামর জনসাধারণ আনন্দিত। নাসির উদ্দিন মিঠুর নেতৃত্বে দেশ নায়ক তারেক রহমানের ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাশী অপর এক প্রার্থী শরিফুল হক সাজুকে বিগত ১৭ টি বছর আমরা মাঠে পাইনি। এখন তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শোডাউন করে গ্রুপিং এর রাজনীতি শুরু করেছেন। যা দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। 
এ বিষয়ে শরিফুল হক সাজুকে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছরের নিরলস রাজনৈতিক ত্যাগ, নিষ্ঠা ও সংগঠনের প্রতি অবিচল আনুগত্যের স্বীকৃতি হিসেবেই মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা–জুড়ী) সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু। রাজনৈতিক প্রতিকূল সময়েও তিনি দলের পতাকা হাতে রেখেছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ছিলেন অগ্রণী। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের পাশে থেকে তিনি যেমন সংগঠনের ভেতর ঐক্য সৃষ্টি করেছেন, তেমনি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন সৎ ও বিনয়ী আচরণে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষায়, মিঠু শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, তিনি বড়লেখা–জুড়ীর মানুষের ভরসার প্রতীক।

বিএনপির কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড তাঁর দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক ভূমিকা, প্রবাসী ও স্থানীয় পর্যায়ে সক্রিয় যোগাযোগ এবং দলের প্রতি অগাধ একনিষ্ঠতা বিবেচনা করেই এবার তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মিঠুর প্রার্থিতা শুধু ব্যক্তিগত সম্মান নয়, এটি দলের প্রতি তাঁর ধারাবাহিক অবদানের মূল্যায়ন। তিনি ইতিমধ্যেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে একত্রে কাজ শুরু করেছেন। তারেক রহমান ঘোষিত “রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা” বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছেন। ফলে মৌলভীবাজার-১ আসনে বিএনপির ঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করার আশার প্রতীক হয়ে উঠেছেন আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু।